– মামুনুর রশীদ

১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই মুক্তি সংগ্রামের পেছনে যে মানুষটি জীয়নকাঠির মত কাজ করেছেন তিনি আর কেউ নন, আমাদেরই মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া, স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের আলোকপাত না হয় আজ নাই করলাম। এই বাঙ্গালী জাতির মুক্তির জন্য পরাক্রমশালী পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বারবার বিভিন্ন নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে যিনি সাহসিকতার অজস্র প্রমাণ রেখে গেছেন ইতিহাসের পাতায় পাতায়, সেই মহানায়ক এই অকৃতজ্ঞ জাতির কিছু দিকভ্রান্ত সদস্যের হাতে শাহাদাত বরণ করেছেন।
আমাদের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে নানান মতের নানান দল ও উপদল থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।তারা মুক্তচিন্তার চর্চা করে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। কিন্তু আমরা নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে কখনো কোন নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর মনে করতে পারিনা। আমাদের কাছে বাংলাদেশর আরেক নাম বঙ্গবন্ধু। আমাদের অদূর অতীতের দেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎসের নাম বঙ্গবন্ধু। সাহসিকতা ও মানবপ্রেমের অপর নাম যেন আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিছুতেই নির্দিষ্ট কোন দলের হতে পারেনা। তিনি আমাদের জাতির আদর্শ। জাতীয় বীর। জাতীয় আদর্শ। তিনি আমাদের মহানেতা। পাকিস্তানী শাসকদের দ্বারা বারবার কারানির্যাতনের পরেও সাহসী হিমালয় তারা গলাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন তারা হাজার বার মুছে দিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। সেই মহান নেতাকে কেন আমরা একটি নির্দিষ্ট দলের করে নিবো? বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জন্ম গ্রহণ করেছে মানেই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই জাতির জনকের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা পোষণ করবে। এমনই তো হওয়ার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত হয়ে দুর্নীতি করে আমাদের জাতির পিতার কি অবমাননা করা হচ্ছেনা? বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে ধর্ষণের সেঞ্চুরী করে কি বাঙ্গালী জাতির এই পরম শ্রদ্ধার পাত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা করা হচ্ছেনা?
১৫ই আগস্টের এই অভিশপ্ত কালো দিনটি বাঙ্গালী জাতির জীবনে কলঙ্কিত একটি দিন। ১৯৭৫ এর সেই কাকডাকা ভোরে জাতির পিতাকে যখন হত্যা করতে প্রবেশ করছিল এ জাতির কিছু কাপুরুষ, তখন বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এই অমানুষগুলো তাদের স্বপ্নদ্রষ্টাকে চিরতরে নিভিয়ে দিতে এসেছে। তিনি তার গার্ডদের গুলি ছুড়তে নিষেধ করে বহিরাগতদের ভেতরে আসতে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাড়ে সাত কোটি মানুষের চোখের মণিকে নিমিষেই বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা করে দিল অকৃতজ্ঞ সেই হায়ানারা।
নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা বঙ্গবন্ধুকে সার্বজনীনরূপে তুলে ধরতে চাই। যে দেশকে স্বাধীন করতে দিবারাত্রি স্বপ্ন দেখে গেছেন,যে জাতিকে পাকিস্তানীদের শোষণের হাত থেকে মুক্ত করতে প্রতিবাদের বজ্রকন্ঠ বারবার উচ্চারণ করেছেন, সে দেশ ও সে জাতি এই মহান নেতাকে কখনো অস্বীকার করতে পারেনা। যে তার জন্মদাতাকে অস্বীকার করে তাকে আমাদের ভদ্র সমাজে খুব সুন্দর শব্দ দিয়ে ডাকা হয় নিশ্চয় জানা আছে সবার।

মামুনুর রশীদ

যে মানুষ এ দেশের আলো বাতাসে বড় হয়েছে। এ দেশের নদীনালা, অপূর্ব সুন্দর সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করছে সে কিছুতেই এ দেশের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টাকে অস্বীকার করার অধিকার রাখেনা।স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যতটা না রাজনৈতিক তারচেয়ে বেশী নৈতিক। রাজনৈতিক থেকে আমরা এখন রাজ শব্দটা দলীয়ভাবে রেখে সর্বসাধারণের জন্য নৈতিক শব্দটাই বেচে নিতে চাই। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা কোন রাজনৈতিক আদর্শের জন্য নয়, এখন সেটা বাঙ্গালী জাতির জন্য নৈতিকতারই অংশ মনে করি। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিভিন্ন দল ও মতের মাঝে এই নৈতিক ভিত্তিটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। স্কুল পড়োয়া ছোট্ট নয়নমণিকে জানিয়ে দিতে চাই বাঙ্গালী জাতির এই মহাপুরুষকে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়োয়া তরুণ তরুণীর মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের প্রতিটা অধ্যায়। কারণ এ দেশ ও এ জাতির ইতিহাস তো বঙ্গবন্ধুরই ইতিহাস। এ স্বাধীনতা তো তারই হাতে গড়া। বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠুক সার্বজনীন। দলমত নির্বিশেষে এক বাক্যে স্বীকৃত হোক বাঙ্গালীর দুর্দিনে জীবন বিলিয়ে দেওয়া এই মহাপুরুষ। আমরা বিশ্বাস করতে চাই ” বঙ্গবন্ধু আমার – তোমার, বঙ্গবন্ধু অনাগত শিশুর, বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংদেশের।”

লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।